আয়রন বা লৌহ আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান এবং এটি একটি খনিজ পদার্থ। আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকার মূল খাদ্য উপাদান হলো ছয়টি— শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন (খাদ্য প্রাণ), মিনারেলস (খনিজ লবন) ও পানি এবং নতুন সংযোজিত খাদ্য উপাদান হলো ফাইবার। আর খনিজ নামক মূল উপাদানটির অন্যতম হলো আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিযাম, জিংক,বোরন, ম্যাঙ্গানিজ আরও অনেক কিছু।
দেহে আয়রনের ঘাটতি হওয়ার প্রধান কারণ অপুষ্টি। খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন না থাকলে শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দেয়। গর্ভবস্থায় এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়ে বাড়তি আয়রনের প্রয়োজন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শারীরিক পরিবর্তন আসায় খাবার রুচি কিছুটা কমে যায়, ফলে তারা পর্যাপ্ত পরিমানে খায় না। এ ছাড়া মহিলারা অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের কারণে আয়রনের ঘাটতিতে ভোগে ।
এ ছাড়া ভিটামিন বি ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি, দীর্ঘমেয়াদি রোগ (যেমন কিডনি বিকল), দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ (যেমন যক্ষ্মা), ক্যানসার, থাইরয়েডের সমস্যা, অস্থিমজ্জায় সমস্যা, সময়ের আগে রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে রক্তশূন্যতার কারণ। তবে সব ধরনের কারণের মধ্যে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সাধারণত পুরুষের তুলনায় মহিলাদের দেহে আয়রনের ঘাটতি বেশি দেখা যায়।
মানুষের শরীরে রক্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে হিমোগ্লোবিন, যার পরিমান রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া বলে। লৌহ বা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
রক্তশূন্যতার ভেতর আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার হারই সবচেয়ে বেশি। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ নারী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্তশূন্যতায় ভোগে। বাংলাদেশে নারীদের গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
পুরুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম। নারীদের রক্তে তা ১২ থেকে ১৫.৫ গ্রাম। কিন্তু এই মাত্রার চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন থাকা স্বাভাবিক নয়। অনেকে ভাবেন, মেয়েরা মাসিক চক্রে ও সন্তান জন্মের সময় অনেকখানি রক্ত হারায়। তাই রক্তে ৯-১০ মাত্রার হিমোগ্লোবিনের কোনো ব্যাপার নয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনটা ভাবা এটি সঠিক নয়, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে (১২ গ্রাম/ডেলি) থাকা মানেই এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলে ।
মানব দেহে আয়রন বা লৌহের ঘাটতির ফলে সৃষ্ট রোগ সমূহ ঃ
- দেহে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়
- শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা।
- পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে কিছু মহিলা গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হন।
- অতিরিক্ত আয়রনের ঘাটতির কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- আয়রনের ঘাটতির ফলে গর্ভবতী মায়েদের প্রিম্যাচিওর শিশু জন্ম দানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেহে আয়রন বা লৌহের প্রয়োজনীয়তা ঃ
- দেহে হিমোগ্লোবিন বা রক্ত রঞ্জনী সৃষ্টির জন্য আয়রনের প্রয়োজন হয়। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে অক্সিজেন পুরো শরীরে বাহিত হয়। তাই আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
- শক্তি, মাংসপেশির সুগঠন এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ কাজ সম্পাদনের জন্য আয়রন প্রয়োজন।
- নারীদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের অন্যতম কারণ হচ্ছে আয়রনের ঘাটতি। সাধারণত ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীদের জন্য আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- মায়ের পেটে থাকা সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
Reviews
There are no reviews yet.